snapdragon vs mediatek

স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেক বিশ্বের অন্যতম দুইটি মোবাইল সলিউশন মাস্টার। এক নিমিষেই বলে দেয়া যায় মিডিয়াটেক কিংবা স্ন্যাপড্রাগনের ব্যাবহার কারো থেকে কারোও কম নয়। যাই হোক, এই স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেক তর্কের মাঝে প্রায়সই আমাকে যে সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়… সেই ধরনের ধরনের ৫ টি প্রশ্নের উত্তর, কারন ও তথ্য আজ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো…
gsmarena_001
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের বানানো মিডিয়াটেক’কে নিয়ে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের খন্ডচিত্র
প্রশ্নঃ মিডিয়াটেকের থেকে স্ন্যাপড্রাগন কি বেশি শক্তিশালী?
উত্তরঃ অবশ্যই! স্ন্যাপড্রাগনের লিডিং পারফর্মেন্সের জন্য বেশ নাম ডাক আছে। তাছাড়া স্ন্যাপড্রাগনের কোর গুলো যথোপযোগী কাজ করতে পারায় এর কাজের গতি বা ডাটা প্রসেসিং এর গতিও বেশি পাওয়া যায়। বিশ্বের টপ লিডিং ব্র্যান্ড যেমন সনি, এইচ টি সি, স্যামসাং, এলজি, মটোরোলার মত কোম্পানী তাদের মেক্সিমাম হ্যান্ডসেটেই স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসর ও চিপসেট ব্যাবহার করে থাকে। অন্যদিকে সস্থায় চিপসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নামে মিডিয়াটেকের যেমন নাম আছে তেমন আবার কোয়াড-কোর প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সব গুলো কোর প্রয়োজনের তুলনায় কাজ না করার সাথে সোর্স কোড উন্মুক্ত না করারও অভিযোগ পাওয়া যায়। এবং যে কারনে পরবর্তীতে মিডিয়াটেক অক্টাকোর প্রসেসর মার্কেটিং করার সময় ট্রু অক্টা-কোর বা True Octa-Core বলে মার্কেটিং করে। তবে মিডিয়াটেকের কোয়াড কোর MT6582 বা ডুয়াল কোর MT6572 চিপসেট গুলোর ভালো বা শক্তিশালী চিপসেট বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া টার্বো টেকনোলোজি এনাবল যেমন MT8389T বা MT8317T এই সিরিজের চিপসেট গুলোও মিডিয়াটেকের তৈরি শক্তিশালী চিপসেট। মূল ব্যাপার হচ্ছে, আপনি কখনই ইউজার লেভেল থেকে মিডিয়াটেক বা স্ন্যাপড্রাগন পাশাপাশি রেখে কোনটা শক্তিশালী তা যাচাই করতে পারবেন না। কারন মিডিয়াটেক তাদের চিপসেট ঠিক সেভাবেই ডেভেলপ করে যাতে করে কোন ইউজার যেন ভোগান্তি’তে না পরে। এটা তাদের প্রসেসর বা চিপসেট সস্থা রাখার জন্য এক ধরনের মার্কেটিং পলিসি।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের লোকাল ব্র্যান্ড সিম্ফোনী বা ওয়ালটনের মত কোম্পানী কেন মিডিয়াটেক ব্যাবহার করে?
উত্তরঃ এর উত্তর খুবি সহজ। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের হ্যান্ডসেট কেনার বাজেট থাকে ১০-১৫ হাজারের মধ্যে। যেহেতু এই কোম্পানী গুলো আমাদের দেশের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান প্লাস এদের বিপণন ব্যাবস্থাও আমাদের দেশের লোকাল মার্কেটের উপরে নির্ভরশীল তাই তারা গ্রাহক চাহিদা অনুসারে মিডিয়াটেক প্রসেসর সমৃদ্ধ হ্যান্ডসেট বাজারজাত করছে। কিন্তু আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের দেশীয় সিম্ফোনী বা ওয়ালটন তাদের হ্যান্ডসেট মিডিয়াটেক চিপসেট ব্যাবহার করলেও তারা তাদের হ্যান্ডসেটের মান বজায় রাখতে মিডিয়াটেকের ভালো বা কার্যকর চিপসেট ব্যাবহার করেই হ্যান্ডসেট ডেভেলপ করে বাজারজাত করছে। লক্ষ্য করুন, আমি আগেই বলেছি মিডিয়াটেক প্রসেসর কেউ কখনো গ্রাহক বা ইউজার লেভেল থেকে এর পার্ফরমেন্স স্ন্যাপড্রাগনের সাথে যাচাই করতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, সিম্ফোনী বা ওয়ালটন এখন তাদের অনেক হ্যান্ডসেটেই কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসর ব্যাবহার করে। যেমনঃ সিম্ফোনীর W70Q, W80, ও ওয়ালটনের H1, S2, Z, ZX (Z এবং ZX এ স্ন্যাপড্রাগনের ৮০০ চিপসেট ব্যাবহার করা হয়েছে। যা বর্তমান বাজারের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নতমানের একটি চিপসেট)
প্রশ্নঃ লিডিং ব্যান্ড যেমন এইচটিসি বা স্যামসাং অথবা সনি কেন মিডিয়াটেকের চিপসেট ব্যাবহার করে না?
উত্তরঃ কে বলছেরে ভাই? সনি এক্সপেরিয়া এম (M), এইচ টি সি ডিজায়ার ৬১৬ মিডিয়াটেক চিপসেট ব্যাবহার করেই বানানো। এছাড়াও Huawei, Motorola, LG এর অনেক সেটেই মিডিয়াটেক পাওয়ারড পাওয়া যায়। স্যামসাং এর ক্ষেত্র আলাদা। কারন তাদের নিজেদের বানানোই চিপসেট আছে। এক্সিনস বেইজড সকল চিপসেট স্যামসাং এর বানানো। যদিও এর মাঝে ঘাপলা আছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এক্সিনসের বানানো চিপসেটগুলো আসলে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনের দুটি কোয়াডকোর প্রসেসর ব্যাবহার করে অক্টাকোর করা হয়। আবার অনেক ফোন রিভিউ সাইট দাবিও করে স্যামসাং এর এক্সিনস অক্টাকোর প্রসেসর আসলে মূলত কোয়াডকোর এটা ভার্চুয়ালি অক্টাকোর করা হয়। যাই হোক সেই বিতর্কে আরেকদিন যাওয়া যাবে, আজ না।
প্রশ্নঃ মানুষ কেন তাহলে মিডিয়াটেক’কে বাজে বলে?
উত্তরঃ এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি গল্প বলতে হবে। একজন লোক গেছেন বাজারে। হঠাৎ সেই ব্যাক্তিকে দেখে আরেকজন বলে ভাই আপনার কানতো নাই, কেটে নিয়ে গেছে। সেই ব্যাক্তি কথাটা শোনেই, দৌড় লাগায় তার কান কে নিল? কিন্তু সে একটিবারও তার নিজের কান চেক করে দেখলো না। ঘটনাও এখানে, কোন এক আল-বালছাল ডেভেলপার বলছে মিডিয়াটেক ফালতু, এইতো হইলো কাম। মিডিয়াতেক ফালতু বইলা দুনিয়া চইষা গেল। অথচ, আপনি যে মাত্র ২-৩ হাজার টাকার বদলৌতে স্মার্টফোনের স্বাদ পাচ্ছেন। এইটা আর কারও মাথায় থাকলো না।
প্রশ্নঃ ধরেন ভাই, আপনাকে যদি সিম্ফোনী বা ওয়ালটনের একটা মিডিয়াটেকের অক্টাকোর হ্যান্ডসেট দেয়া হয় আর স্যামসাং এর স্ন্যাপড্রাগনের অক্টাকোর দেয়া হয়। আপনে কোনটা নিবেন?
উত্তরঃ ভাই, একটাই কথা। আমার বাজেটে যেটা পোষাবে। সেটাই নিবো। অবশ্যই আমার সারাদিন ফেসবুকিং বা হুয়াটস অ্যাপিং অথবা ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস খেলার জন্য মিডিয়াটেক বা স্ন্যাপড্রাগন নিয়ে মাইক্রোস্কোপ বা ল্যাবে গিয়ে র্যাট টেস্ট চালানো লাগবে না, যে কোনটা আমাকে ভালো পার্ফমেন্স দিচ্ছে। তাই না?
শেষ কথা, শোনেন ভাই দুনিয়াতে যেমন ভালো জিনিসের বদনামের অভাব নাই তেমন সস্থা জিনিসগুলারও বদনামের অভাব নাই। এখন স্যামসাং পেটেন্ট মামলায় ফাইসা গেছে এটা বদনাম তাই বলে কি দুনিয়ার মানুষ স্যামসাং কেনা ছেড়ে দিবে? আইফোন বেন্ড কইরা পকেটে ভাজ করে রাখা যায় এটাও বদনাম তাই বলে কি দুনিয়ার জুড়ে আইফোনের বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে? না ভাই! হয় নাই। সুতরাং আপনার কাছে যেইটা পার্ফেক্ট মনে হবে। আপনি অবশ্যই সেইটা কিনবেন। দরকার হইলে সব খুটিনাটি জেনে গুগল বা ইউটিউবে সার্চ করবেন। দেখবেন হাজার হাজার রিভিউ, টেস্ট পাবেন। সেগুলো দেখে জানার চেষ্টা করবেন আসলে ঘটনা কোনটা? তবেই আপনে ওই আল-বালছালদের কাছে থেকে দূরে সরে এসে ভালো একটা জিনিস কিনতে পারবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

mobile dpi

মোবাইল নেবার আগে একটু কোম্পানি প্রোমোটোর দের কাছ থেকে জেনে নিই

Android device manager কাজ